সর্বশেষ সংবাদ

আপনার প্রিয় উখিয়া নিউজ শীঘ্রই নতুন নামে আত্নপ্রকাশ করতে যাচ্ছে...UNC............ www.ukhianews.com

বান্দরবানের সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন,ব্যাপক পাহাড় ধস, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত\ অভ্যন্তরীণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ,বান্দরবানে পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে মা-ছেলের মৃত্যু, আহত ২:

বদরুল ইসলাম মাসুদ, বান্দরবান থেকে
বান্দরবানে ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে একই পরিবারের মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে মা ও মেয়েসহ দুই জন। বান্দরবান-রোয়াংছড়ি সড়কের রোয়াংছড়ি উপজেলার রামজাদি সংলগ্ন পেশকার ঘোনায় মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- দিনমজুর আবুল বশরের স্ত্রী রাহেজা বেগম (৩০) ও তার ছেলে আবু বক্কর (আট মাস)। আহতরা হলো- আবদুস শুক্কুরের স্ত্রী জুলেখা বেগম (২৫) ও মেয়ে শারমিন আক্তার (১৮ মাস)।এদিকে ভারী বর্ষণের কারণে রাস্তায় পানি উঠে যাওয়ায় বান্দরবানের সাথে দুপুরের পর থেকে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অভ্যন্তরীণ সড়কেও বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে রাস্তায় পড়ায় ও রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শামসুল আলম জানিয়েছেন, বেলা ১১টার দিকে প্রবল বর্ষণের পর পেশকার ঘোনা এলাকায় পাহাড়ের কিনারে থাকা দুটি কাঁচা বসত ঘরে পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে। এতে ঘরগুলো ভেঙ্গে যায়। সেখানে থাকা একই পরিবারের মা ও ছেলে ঘর চাপায় মারা গেছে। এছাড়া পাশের ঘরে থাকা মা ও মেয়ে গুরুতর আহত হয়েছে।
এদিকে বান্দরবানের দমকল বাহিনী (ফায়ার সার্ভিস) কর্মীরা পাহাড় ধসের খবর পেয়ে পেশকারঘোনায় ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতদের লাশ উদ্ধার করেছে ও আহতদের উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করেছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নুরুল আবছার একই পরিবারের মা ও ছেলের মৃত্যুর কথা স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেছেন, পাহাড়ের পাদদেশে কাঁচা ঘর হওয়া ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড়ের মাটি ধসে ঘরের উপর পড়ে এ ঘটনা ঘটেছে। তিনি জানান, মাইকিং করে পাহাড়ের পাদদেশে ও নদী তীরবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রসহ নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ ও মাইকিং করা হয়েছে।
পাহাড় ধসে ঘর চাপায় নিহতের ঘটনার খবর পেয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নুরুল আবছার, ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাঃ মংতেঝ, প্রেসক্লাব সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীরসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা আহতদের চিকিৎসা ও সহায়তার ব্যবস্থা করেছেন।
এদিকে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জেলার সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বান্দরবানের সাথে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, রাঙ্গামাটিসহ সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ দুপুরের পর থেকে বন্ধ রয়েছে। এছাড়া বান্দরবানের অভ্যন্তরীণ রুটেও পাহাড় ধসে রাস্তায় মাটি পড়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বান্দরবান পূরবী-পূর্বাণী চেয়ার কোচ মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ ইসলাম জানিয়েছেন, বান্দরবানের সাথে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের যোগাযোগকারী বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের বাজালিয়া ও আমতলী এলাকায় রাস্তায় পানি উঠে যাওয়ায় দুপুর একটা থেকে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে কার্যত সারাদেশের সাথে বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বান্দরবানের সাথে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি যোগাযোগের বান্দরবান-চন্দ্রঘোনা সড়কের পুলপাড়া এলাকায় রাস্তায় পানি উঠে তলিয়ে যাওয়ায় ওই সড়কেও সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া বান্দরবান-রোয়াংছড়ি, বান্দরবান-রুমা-থানচি সড়কেও বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে রাস্তায় মাটি পড়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে অভ্যন্তরীণ সড়ক পরিবহণ (শৈলশোভা পরিবহণ) মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক জাফর উল্লাহ জানিয়েছেন।
জেলার লামা-আলীকদম-চকরিয়া সড়কের কুমারী-ফাঁসিয়াখালী এলাকায় রাস্তায় পানি উঠে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন। তিনি জানান, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পানি এসে লামা বাজারের বিভিন্ন অঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। তাঁর সরকারি বাসভবনটিও পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কিছু কাঁচা বসত ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে তিনি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাইল বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখছেন, তবে বেলা তিনটা পর্যন্ত বিস্তারিত ক্ষয়ক্ষতির খবর নিরূপন করা যায়নি। লামার সাবেক পৌর মেয়র তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, বাজারের মাঝখানে ও প্রেসক্লাব এলাকাতেও পানি উঠে রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে। ফলে অনেক দোকান পাট বন্ধ রয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান তোফাইল আহমদ জানিয়েছেন, নাইক্ষ্যংছড়ির সাথে যোগাযোগের নাইক্ষ্যংছড়ি-রামু সড়কের আদর্শ গ্রাম এলাকায় রাস্তায় পানি উঠে তলিয়ে যাওয়ায় সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ভারী বর্ষণে বেশ কিছু কাঁচা বসত ঘরও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এদিকে ভারী বর্ষণের কারণে বান্দরবান শহরের হাফেজঘোনা, আর্মিপাড়া, শেরেবাংলানগর, ইসলামপুর, লাঙ্গীপাড়া, বনানী স’মিল এলাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে অনেক কাঁচা বসত ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। হাফেজঘোনায় পাহাড়ের উপর থাকা শাহ আলম মাস্টারের ঘর ধসে পড়েছে, জেলা জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সভাপতি হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমানের বসত ঘরের উপর পাহাড় ধসে পড়ায় ঘর দুটি ভেঙ্গে গেছে। তবে কেউ আহত হয়নি। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য কাজী মজিবর রহমানের শহরের বনানী স’মিল এলাকার বসত ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে।
এদিকে গত দুই দিন ধরে বান্দরবানের ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বান্দরবান মৃত্তিকা সংরক্ষণ ও পানি বিভাজিকা ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র (এসআরডিআই) এর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও স্টেশন ইনজার্চ জোবায়ের আল আরমান জানিয়েছেন, সোমবার সকাল ৯টা হতে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় তারা ১০৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছেন। তবে মঙ্গলবার সকাল ৯টার পর প্রবল বর্ষণ হয়েছে। তিনি বলে মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত প্রায় ৫০ মি.মি বৃষ্টিপাত হয়েছে।



ছবি ৪টি, ফাইল নাম- বান্দরবান ফ্লাড ১, ২, ৩,৪
ক্যাপশান- বান্দরবানঃ বান্দরবানের পেশকারঘোনায় মঙ্গলবার দুপুরে পাহাড় ধসে ঘর চাপায় নিহত মা ও ছেলে। বান্দরবান শহরের ইসলামপুরে যাওয়ার সেতুটি পানিতে তলিয়ে যায় এবং শহরের বনান স’মিল এলাকায় সাঙ্গু নদীর তীরে একটি বসত ঘর এভাবেই পানিতে নিম্নজ্জিত রয়েছে। ছবিগুলো মঙ্গলবার দুপুরে তোলা।

কোন মন্তব্য নেই: